Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

একটি জমিদারবাড়ি, দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িক হিংসা

লক্ষ্মীপুর: এখন যা ধ্বংসস্তূপে পরিণত, একসময় ছিল রাজকীয় জমিদারবাড়ি। লক্ষ্মীপুর জেলা সদর থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে দালাল বাজারের জমিদারবাড়িটি ছিল একসময় জমিদার লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণবের প্রতিষ্ঠিত, ৪০০ বছরের ইতিহাস সম্বলিত এক ঐতিহ্যবাহী বাড়ি।

যে বাড়িটি আজ পরিত্যক্ত, একসময় সেখানে বসবাস করতেন লক্ষ্মীনারায়ণের বংশধরেরা, যারা ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক এজেন্ট ছিলেন। স্থানীয় জনগণ তাদের ব্রিটিশদের দালাল মনে করতেন, সেজন্য বাড়িটির নাম হয়েছিল ‘দালাল বাজার জমিদারবাড়ি’।

১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর, ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’-এর পর লক্ষ্মীপুরে আছড়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। সেই সময়, জমিদার রাজেন্দ্রলাল চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের বাড়ি আক্রমণের শিকার হয়। লক্ষ্মীপুরের হিন্দু ব্যবসায়ীরা হামলার শিকার হয়, এবং এই পরিস্থিতিতে বহু পরিবার এক কাপড়ে কলকাতায় চলে যায়। লক্ষ্মীনারায়ণ জমিদারবাড়ির বাসিন্দারাও তাঁদের বাড়ি ছেড়ে চলে যান, সেই সময় থেকেই বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

বাড়িটি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও, তা এক ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানকার রাজকীয় প্রবেশদ্বার, প্রশস্ত অন্দরমহল, অন্দরপুকুর এবং শানবাঁধানো ঘাট—এই সমস্ত কিছুই একসময় ছিল। আজও সেখানে পুরোনো ইটের দেয়ালে পরগাছা, ঘরের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা এবং আশেপাশে নারকেল ও সুপারির বাগান চোখে পড়ে।

২০২১ সালে, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এই জমিদারবাড়ির সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত করে। স্থানীয়দের মতে, এটি ছিল জমিদারবাড়িকে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে রক্ষার একটি প্রয়াস। তবে, সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো এটিকে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করা এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা।

স্থানীয় শিক্ষার্থীরা এই বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে আরো জানতে চান এবং তারা মনে করেন যে, সরকারিভাবে এটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলে, এটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে।

শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, “জমিদারবাড়ি দেখতে এসেছি। বাড়িটির কারুকাজ অনেক সুন্দর, তবে ভেতরের পরিবেশ খুবই নোংরা। কর্তৃপক্ষ এটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে অনেক পর্যটক ও শিক্ষার্থী আসবেন।”

আবিদ হোসেন, “এটি লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন। সরকারি উদ্যোগে এটি সংরক্ষণ করা দরকার। নতুন প্রজন্মের জন্য ইতিহাস জানার সুযোগ তৈরি করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।”

এই জমিদারবাড়ি শুধু একটি বিলুপ্ত পরিবার বা স্থাপত্য নয়, এটি ঐতিহাসিক এক কালপর্বের সাক্ষী, যা এখন আমাদের অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.