পদ্মা নদীর উপর একটি বিরল ও চমকপ্রদ প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেকের নজরে আসে- আকাশ থেকে নদীর দিকে নেমে আসা এক সাদা রশ্মির মতো ঘূর্ণায়মান বায়ুর ধারা। এরকম অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।অনেকেই এটি দেখে বিস্মিত হন এবং আতঙ্কিতও বোধ করেন। তবে বাস্তবতা হলো, এটি একটি স্বাভাবিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যাযোগ্য প্রাকৃতিক ঘটনা, যার নাম জলস্তম্ভ বা ইংরেজিতে Waterspout। বাংলার গ্রামাঞ্চলে একে “মেঘশূর” নামেও ডাকা হয়।
বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে এবং মাটির কাছাকাছি তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ হয়। এই গরম ও আর্দ্র বাতাস ওপরে ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে মিশলে একটি উল্লম্ব ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। পদ্মা নদীর মতো বড় জলাশয়ের উপর এই তাপমাত্রা পার্থক্য আরও কার্যকর হয়, যার ফলে জলস্তম্ভ গঠনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।
জলস্তম্ভ হলো একটি ঘূর্ণায়মান বায়ুর স্তম্ভ, যা মূলত জলাশয়ের উপর গঠিত হয়। এটি দেখতে অনেকটা টর্নেডোর মতো হলেও কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। সাধারণত এটি আকাশে থাকা কিউমুলাস বা কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে নদী, হ্রদ বা সাগরের দিকে নেমে আসে। বাতাসের ঘূর্ণিবল এবং আর্দ্র পরিবেশের কারণে একটি ফানেল আকৃতির বায়ুর স্রোত নিচের দিকে ধাবিত হয় এবং তার ফলে একটি সাদা স্তম্ভ তৈরি হয়, যেটি অনেক দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যায়।
জলস্তম্ভ গঠিত হয় যখন নদী বা সাগরের গরম ও আর্দ্র বাতাস দ্রুতগতিতে ওপরে উঠে গিয়ে ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে আসে। তখন এই বাতাস ঘূর্ণি আকারে ঘুরতে শুরু করে এবং তার একপ্রান্ত নিচের দিকে ছুটে আসে। মেঘ ও জলাশয়ের মধ্যে যে দৃশ্যমান সাদা স্তম্ভ দেখা যায়, সেটিই জলস্তম্ভ। দেখতে মনে হয় যেন আকাশ থেকে পানি টেনে নিচ্ছে, যদিও মূলত এটি বাতাস ও আর্দ্রতার ঘূর্ণিবল।
Fair-weather waterspout বা সাধারণ আবহাওয়ার জলস্তম্ভ সাধারণত খুব বেশি বিপজ্জনক নয়। এগুলো সাধারণত কম সময় স্থায়ী হয় এবং দ্রুতই মিলিয়ে যায়। তবে যদি এটি কোনো নৌযানের খুব কাছে চলে আসে বা নদীর তীরে ছোট কাঠামোর উপর দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে কিছুটা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি একটি দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক ঘটনা এবং আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।