Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

আইনে নেই, ২৫ দিনে হাজার ছাড়িয়েছে ভারতের পুশ ইন

ভারত থেকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ চলছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও পুশ ইন বন্ধ হয়নি।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, গত ৫ আগস্টের পর ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা-কর্মীকেও পুশ ইন করেছে দেশটি।

পুশ ইন যেভাবে শুরু

গত ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ ভারতীয় নাগরিক নিহত হন। এরপর গুজরাটে অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যক্তিকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ দাবি করে আটক করা হয় এবং পরে তাদের বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়।

৭ মে প্রথম দফায় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৬৬ এবং কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আরও ৩৬ জনকে পুশ ইন করা হয়। এরপর থেকে পুশ ইন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

২৫ দিনে এক হাজার ছাড়িয়েছে

৭ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত সময়ে ভারত থেকে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। সীমান্তভেদে সংখ্যাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

  • মৌলভীবাজার: ৩৩১

  • খাগড়াছড়ি: ১১১

  • কুড়িগ্রাম: ৬০

  • হবিগঞ্জ: ১৯

  • সুনামগঞ্জ: ১৬

  • দিনাজপুর: ২

  • ঠাকুরগাঁও: ১৯

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ১৭

  • পঞ্চগড়: ৩২

  • লালমনিরহাট: ২০

  • চুয়াডাঙ্গা: ১৯

  • মেহেরপুর: ৩০

  • ঝিনাইদহ: ৪২

  • কুমিল্লা: ১৩

  • সাতক্ষীরা: ২৩

  • ফেনী: ৩৯

এছাড়া সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের ভেতর দিয়েও ৭৮ জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে ভারত।

আইনি স্বীকৃতি নেই

পুশ ইন বা পুশ ব্যাক—এই দুই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্তে এই ব্যবস্থা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে হঠাৎ করে ব্যাপক হারে পুশ ইন শুরু হয়েছে, তা নজিরবিহীন।

বাংলাদেশ বলেছে, যদি ভারতে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক থাকেন, তাহলে তাদের তালিকা দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো উচিত। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া মানা হচ্ছে না।

এক পুশ ইন ভুক্তভোগী খাইরুল ইসলাম সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেছেন, তিনি আসামের এক স্কুলের শিক্ষক এবং ভারতীয় নাগরিক, কিন্তু বিএসএফ জোর করে তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

চার দফা চিঠি, ভারতের প্রতিক্রিয়া

পুশ ইন বন্ধে বাংলাদেশ ভারতকে ৮, ১৩, ১৫ ও ২০ মে চার দফা চিঠি দিয়েছে। চিঠিগুলোতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, কারো নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হয়ে যেন কাউকে বাংলাদেশে পাঠানো না হয়।

তবে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ‘অবৈধ অভিবাসী’ নিয়ে তাদের স্থানীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তালিকা দিয়েছে ভারত

ভারত দাবি করেছে, তাদের দেশে অবস্থানরত ২ হাজার ৪৬১ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। ২১ মে ভারতের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ঢাকায় পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৬০ জনের তথ্য যাচাই চলছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, যেসব বিদেশি নাগরিক ভারতে অবৈধভাবে রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশকেও দ্রুত যাচাইয়ের আহ্বান জানানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা আতঙ্কে

৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে ভারতে থাকা আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে পুশ ইন করেছে ভারত। ফলে সেখানে অবস্থানরত অনেকে আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ ভারত ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

কূটনৈতিক তৎপরতার আহ্বান

পুশ ইন বন্ধে বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিতে পারে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, “কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে দিল্লি ও কলকাতা মিশনে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। না হলে সীমান্তে প্রতিদিন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই থাকবে।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য

২১ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “দিল্লির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। নিয়মের বাইরে কিছু না ঘটে—সেদিকে নজর দিচ্ছি। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) রয়েছে, সেই অনুযায়ী যাচাই করছি।”

পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করছি। যারা পুশ ইন হচ্ছেন, তারা তালিকাভুক্ত কি না, যাচাই করতে হবে। একটা নাম মিললেই সেটা নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না—আমাদের নিশ্চিত হতে হবে ব্যক্তি আসলেই বাংলাদেশি কি না।”

Leave A Reply

Your email address will not be published.