কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও অনুষদ ইউনিট থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের হিড়িক উঠেছে। সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় পদত্যাগের হিড়িক। গতকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জনেরও বেশি ছাত্রলীগে পদধারী পদত্যাগ করেছন।
ঢাবিতে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের হিড়িক-
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও অনুষদ ইউনিট থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের হিড়িক উঠেছে। সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় পদত্যাগের হিড়িক। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের অন্তত ২২ জন নেতা-নেত্রী পদত্যাগ করেছেন। এর মাঝে পাঁচ জন রবিবার কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই পদত্যাগ করেন।
এছাড়াও হামলার ঘটনায় নির্লিপ্ত থাকা ও সংগঠনের নেতাদের সম্পৃক্ততার কারণে বিভিন্ন সংগঠনের মেসেঞ্জার গ্রুপগুলো থেকে লিভ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এসময় একটি সেশনের ছাত্রলীগের ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রলীগ গ্রুপ থেকে লিভ নেওয়ার স্ক্রিনশট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এছাড়াও পদত্যাগকারী নেতারা তাদের নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইলেও ঘোষণা দেন। পদত্যাগকৃতরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সহসভাপতি জান্নাতুল মাওয়া, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন এবং একই হলের আইন সম্পাদক সিরাজাম মনিরা তিশা, এই হলেরই প্রচার সম্পাদক আমরিন জান্নাত তাইরু, একই হলের নাট্য ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মেহেরুন্নিসা মিম।
ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ আহমেদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম হৃদয়, একই অনুষদের বিষয়ক উপ সম্পাদক জেবা সায়ীমা, সার্জেন্ট জহরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ওয়াসিক, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, বিজয় একাত্তর হল শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত, জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের মো. রাফিউল ইসলাম রাফি, একই হলের কার্যনির্বাহী সদস্য মেহেদী হাসান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার রাতেই পদত্যাগ করেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ কলাভবন ছাত্রলীগের এক নম্বর সহসম্পাদক মো. মুহাইমিনুল ইসলাম, আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম এবং রাসেল হোসেন।
বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব লেখেন, আমি হাসিবুল হাসান হাসিব সহ-সভাপতি বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার পূর্বের সব সম্পর্ক ত্যাগ করলাম, আমার ছোটভাই বন্ধুদের অনেককে নির্মমভাবে পেটানো হইছে। ঘৃণা হচ্ছে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে এতদিন কাজ করায়; বিদায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ!
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন লেখেন, ছাত্রলীগকে ন্যায়ের কান্ডারি ভেবে ছাত্রলীগ করতাম। কিন্তু এখন এই সংগঠনের সাথে নিজের সম্পৃক্ততা ছিলো এটাও মনে করলে আমার রক্তাক্ত বন্ধুবান্ধবী, সিনিয়র, জুনিয়রদের চেহারা মনে পড়বে। তাই স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পদত্যাগ করছি।
ইসরাত জাহান সুমনা লেখেন, আমি ইসরাত জাহান সুমনা উপ-পাঠাগার সম্পাদক বাংলাদেশ শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পদ থেকে সজ্ঞানে অব্যাহতি নিচ্ছি। এই পদ এবং সংগঠনে আমার কোনও পরিচয় নেই, বরং ঘৃণিত এবং লজ্জিত হবো নিজেরই কাছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার সঙ্গে জড়িতদের সামাজিক বয়কট ও তাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন তাদের সহপাঠীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ-
অপরদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছাত্রলীগ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে । গত কয়েকদিনের মধ্যে এ সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে চলছে। এ পর্যন্ত পদত্যাগ ও স্বেচ্ছায় ছাত্রলীগ ছাড়ার ঘোষণা অব্যাহত রয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পনের জনের বেশি নেতাকর্মী স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাটি প্রত্যেকেই নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।
ছাত্রলীগ কেন ছাড়ছেন? এ নিয়ে কথা হয় জবি ডিপার্টমেন্টভিত্তিক ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ও পদপ্রাপ্ত নেতার সঙ্গে। তারা কেউ কেউ বলেন, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চান বা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তারা কোটা আন্দোলন সমর্থন করছেন, তাই ছাত্রলীগ ছাড়ছেন। বিশেষ করে সোমবার (১৫ জুলাই) কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ ছাত্রলীগের ২নং সহ-সভাপতি তৌসিফ কবির পদত্যাগ করে ফেসবুকে লিখেন, আমি ১৫ জুলাই থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ হতে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু এবং নেত্রীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমি আমার ভালোবাসার সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি, কিন্তু আজ পদত্যাগ করলাম। নিজের সংগঠনের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা এবং সম্মান রেখে, দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখাকেই আমি সর্বোচ্চ সফলতা মনে করি। জয় বাংলা, ধন্যবাদ।
ফেইসবুকে পোস্ট করে নিজ ইচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে মো. মাহমুদুল হাসান নোমান।
উল্লেখ্য, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে এখন পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়াদোত্তীর্ণ আংশিক কমিটি থেকে কেউ পদত্যাগ না করলেও পদত্যাগ করছেন বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের পদধারী নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে রয়েছেন সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কর্মীসহ অন্যান্য পদধারীরা।