Dhaka Reader
Nationwide Bangla News Portal

অভ্যুত্থানে নিহতের ৭৮ শতাংশই গুলিতে : জাতিসংঘ

নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস দমন-পীড়নের ফলে অভ্যুত্থানকালে নিহতদের ৭৮ শতাংশই গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেড় মাসে অন্তত ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশে ব্যবহৃত সামরিক রাইফেল, শটগান ও অন্যান্য প্রাণঘাতী অস্ত্রের গুলিতে নিহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ এবং অন্যান্য ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র’ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনটি।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলিতে নিহতদের মধ্যে ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে এমন অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে, যা সাধারণত যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্বয়ংক্রিয় ও আধা-স্বয়ংক্রিয় সামরিক রাইফেল, যেমন: এসকেএস, টাইপ-৫৭, বিডি-০৮, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ব্যবহার করে থাকে।

১২ শতাংশ মৃত্যুর কারণ শটগানের প্রাণঘাতী ছররা গুলি, যা বাংলাদেশ পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ অভ্যুত্থানকালের প্রতীক হয়ে ওঠেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিক্ষোভের সময় দুই হাত ছড়িয়ে তিনি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমাকে গুলি করুন”।

জাতিসংঘের ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আবু সাঈদ কমপক্ষে দুইবার শটগানের গুলিতে আহত হন, যা ১৪ মিটার দূরত্ব থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার মৃত্যু ‘ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।

প্রতিবেদনে শিশুদের উপর সহিংসতা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ১২ বছর বয়সী এক বালক ধানমণ্ডিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়, যার শরীরে ২০০টিরও বেশি ছররা গুলি পাওয়া যায়।

নারায়ণগঞ্জে ছয় বছর বয়সী এক শিশু তার বাড়ির ছাদ থেকে বিক্ষোভ দেখার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীদের উপর শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণের হুমকি এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনাও নথিভুক্ত করা হয়েছে।

বিক্ষোভ দমনে র‌্যাব, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহারের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব হেলিকপ্টার থেকে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। যদিও গুলি ছোঁড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি, তবে আহতদের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘জলপাই-সবুজ রঙের হেলিকপ্টার’ থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যগুলো পূর্ণাঙ্গ সত্য নয়, তবে যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এসব তথ্য যাচাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.